কত সপ্তাহে বাচ্চার নড়াচড়া বুঝা যায়

গর্ভস্থ বাচ্চার নড়াচড়া প্রথম যেদিন গর্ভবতী মা বুঝতে পারেন, সেইদিনের অভিজ্ঞতা একমাত্র সেই গর্ভবতী মা-ই বলতে পারবেন, সে কি আনন্দ। এই আনন্দময় মুহূর্তের জন্য গর্ভবতী মায়েরা অপেক্ষায় থাকেন। এই নড়াচড়াকে গর্ভস্থ শিশুর সুস্থতার একটি বড় লক্ষণ হিসেবে চিকিৎসকেরা বিবেচনা করে থাকেন। তাই চিকিৎসকেরা পরামর্শ দেন গর্ভস্থ বাচ্চার সারা দিনের নড়াচড়া যেন খেয়াল করে রাখা হয়। কোনো রকম সমস্যা দেখা দিলে বা ব্যত্যয় ঘটলে তা চিকিৎসককে খুব দ্রুত জানাতে হবে।

কত সপ্তাহে বাচ্চার নড়াচড়া বুঝা যায়

কত সপ্তাহে বাচ্চার নড়াচড়া বুঝা যায়?

সাধারণত ১৮ থেকে ২৪ সপ্তাহে বা গর্ভধারণের ৪মাসের মধ্যে গর্ভবতী মা পেটের ভেতর শিশুর নড়াচড়া প্রথম টের পেতে শুরু করেন। এই সময় মৃদু কম্পন বা ধাক্কার মতো অনুভূতিটা হয়। এভাবেই আস্তে আস্তে গর্ভবতী মা বাচ্চার নড়াচড়া আরও ভালো টের পেতে শুরু করেন। প্রথম প্রথম গর্ভবতী মা অনভিজ্ঞতার কারণে ১৮ সপ্তাহে তা না-ও বুঝতে পারেন। এতে ভয়ের কিছু নেই।


একেক বাচ্চার নড়াচড়া একেক ধরনের হয়ে থাকে। বাচ্চারা যে সব সময় নড়তেই থাকবে, তা-ও কিন্তু নয়। যেমন ঘুমের সময় বাচ্চা নড়াচড়া করবে না। গর্ভের মধ্যে কিন্তু বাচ্চা বিশ্রাম নেয় বা ঘুমায়। তবে এই বিশ্রাম বা ঘুম একটানা ৯০ মিনিটের বেশি হয় না বা হওয়ার কথা নয়। গর্ভবতী মাকে বুঝে নিতে হবে তার গর্ভস্থ বাচ্চাটি কখন কতক্ষণ সাধারণত ঘুমায়।

২৮ থেকে ৩৬ সপ্তাহ গর্ভকালে সবচেয়ে বেশি বাচ্চার নড়াচড়া বোঝা যায়। এতে গর্ভবতী মায়েরা অভ্যস্তও হয়ে পড়েন। সাধারণত খাওয়াদাওয়ার পর বাচ্চার নড়াচড়া বেশি বেড়ে যায়।

সাধারণত ৩৬ থেকে ৪২ সপ্তাহ গর্ভকালে গর্ভস্থ বাচ্চা আকারে বেশ বড় হয়ে যায় ও তার নড়াচড়ার স্থান কমে যায়। ফলে তার নড়াচড়ারও তীব্রতা কমে যায়। কিন্তু নড়াচড়া একেবারেই কমে না।

গর্ভস্থ মা যদি বাচ্চার নড়াচড়া গণনা করতে চায় তবে সবচেয়ে ভালো সময় হলো দুপুরে ভরাপেটে খেয়ে বাঁ কাত হয়ে শুয়ে বিশ্রাম নেওয়ার সময়। বাচ্চার নড়াচড়া গণনার জন্য কাউন্ট টু টেন হচ্ছে সবচেয়ে সহজ ও স্বীকৃত পদ্ধতি। এই পদ্ধতিটা হলো প্রতি দুই ঘণ্টায় বাচ্চা কতবার নড়ে উঠল, তার হিসাব রাখা। ২ ঘণ্টায় অন্তত ১০ বার নড়াচড়া করলে সেটা স্বাভাবিক।

কিছু কারণ আছে যার ফলে বাচ্চার নড়াচড়া কমে যেতে পারে এমনকি দীর্ঘ সময় ধরে না-ও নড়াচড়া করতে পারে। এগুলোর কারণ হলো গর্ভফুলে সামনের দিকে থাকা, তীব্র ব্যথানাশক বা ঘুমের ওষুধ খাওয়া, মা অ্যালকোহলে আসক্ত বা ধূমপায়ী হলে, জরায়ুর পানি অতিরিক্ত কমে গেলে, মায়ের যেকোনো জটিল শারীরিক-মানসিক সমস্যা, শিশুর শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি। নড়াচড়া হঠাৎ কমে যাওয়া মানে গর্ভস্থ শিশু নিস্তেজ হয়ে পড়ছে। কিক কাউন্ট কমে গেলে মৃত সন্তান প্রসবের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই গর্ভকালে, বিশেষ করে শেষের দিকে কিক কাউন্ট করা ও যথাযথ সময়ে প্রয়োজনে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি।

Post a Comment

Previous Post Next Post

যোগাযোগ ফর্ম