বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা হলে কি খাবার খেতে হবে

আমরা প্রায়শই দেখতে পাই সারা দেশেই শিশু এবং বয়স্কদের ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে। তবে আমাদের দেশে বাচ্চাদের পাতলা পায়খানার সমস্যা বছরজুড়েই দেখা যায়। অনিরাপদ ও অপরিষ্কার খাদ্য বা দূষিত পানির কারণেই বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়ার দেখা দেয়। আবার অপ্রতুল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আর খাওয়া দাওয়ায় ভুল অভ্যাসেও বাচ্চাদের ডায়রিয়া বাড়িয়ে তোলে। তাই আমাদের মনে প্রশ্ন দেখা দেয় বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা হলে কী খাওয়াতে হবে। এই আর্টিকেলে প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করছি।

বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা হলে কি খাবার খেতে হবে( diarrhea in children)


হ্যাঁ বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা হলে খাবার খাওতে হবে। যদিও কিছু নিয়ম মানতে হবে।


যেসব খাবার বেশি করে দিবেন

 বুকের দুধঃ সাধারণত বাচ্চাদের জন্মের প্রথম ছয় মাস শুধুমাত্র বুকের দুধ এবং দুই বছর বয়স পর্যন্ত পারিবারিক খাবারের সাথে বুকের দুধ নিশ্চিত করতে হয়। ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা চলাকালীন বুকের দুধ পানিশূন্যতা পূরণ করে, পুষ্টি সরবরাহ এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।


পারিবারিক খাবার

ছয় মাস পরবর্তী বাচ্চাদের ভাত, ভাতের মাড়, চিড়ার পানি, ঘরে তৈরি বিশুদ্ধ পানি সহ বানানো ফলের রস খাওয়াতে পারেন। কলা (কাঁচা এবং পাকা) খেতে দিবেন। এটি ডায়রিয়া দমনের পাশাপাশি পটাসিয়াম লবণের যোগান দেয়। বাচ্চাদের শরীরে পটাসিয়ামের ঘাটতি থাকলে বাচ্চাদের ঘাড় ফেলে দেওয়া, পেট ফেঁপে বা ফুলে যাওয়া থেকে শুরু করে হৃৎপিন্ডের সমস্যা পর্যন্ত হতে পারে। আবার আপনি চাইলেব বাচ্চাদের ডাবের পানিও পান করাতে পারেন, এতে প্রচুর পটাসিয়াম থাকে।


এই সময় বাচ্চাদের ঘরে তৈরি টক দৈ দিবেন। এটি অন্ত্রের ক্ষতিকর জীবাণুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে।


যেসব খাবার খাওয়ানো যাবে না

বাইরের যেকোনো ধরনের দুধ (গরু, ছাগল, কৌটা), সুজি, সেরেলাক, হরলিকস্, কম্প্লেন জাতীয় কৌটা, দোকানের খাবার/ জুস দিবেন না। এগুলোতে বিদ্যমান কোন উপাদানের ইনটলারেন্সের কারনে পাতলা পায়খানা আরও বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।


খাওয়ার স্যালাইন বা রাইস স্যালাইন

স্যালাইনও এক প্রকার ওষুধ। এর কাজ পানি ও লবণ শূণ্যতা পূরণ করা। এটিও প্রয়োজেন মত দিতে হবে। কম বা অনেক বেশী পরিমানে দেয়া যাবে না। এর পরিমাণ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাওয়াবেন। ভুল নিয়মে কিংবা অতিরিক্ত(মগে বা গ্লাসে আন্দাজ মত পানি না নিলে যা হয়) বানানো স্যালাইন শিশুর মৃত্যুর কারণ হতে পারে।


অ্যান্টিবায়োটিক

অধিকাংশ পানির মত পাতলা পায়খানায় অ্যান্টিবায়োটিকের কোন উপকার নেই। অধৈর্য্য হয়ে একটার পর একটা অ্যান্টিবায়েটিক খাওয়াবে না। এতে ভালোর চেয়ে খারাপের সম্ভবনাই বেশী। তবে জিংক দিলে কিছুটা উপকার হতে পারে।


বেশি সমস্যা দেখা দিলে শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করান

যদি, শিশুর শরীর নিস্তেজ/ ঘাড় ফেলে দেয়,বেশি পানিশূন্যতার লক্ষণ দেখা দেয় (চোখ বসে যাওয়া, অশ্রু শুকিয়ে যাওয়া, জিহ্বা শুষ্ক হওয়া, পেটের চামড়া ঢিলা হওয়া), প্রস্রাব কমে যাওয়া  কিংবা বন্ধ হয়ে গেলে (৬-৮ ঘন্টা প্রস্রাব করেনি, কিংবা ১২ ঘন্টায় মাত্র ১-২ বার), একাধারে বমি করলে (ঘন্টায় ৩ বারের বেশি), রক্ত পায়খানা কিংবা খিঁচুনি হলে। দ্রুত বাচ্চাকে হাসপাতালে ভর্তি করান।


ডায়রিয়া প্রতিরোধে আমাদের করনীয়

হাত ধোয়ার অভ্যাস করা, পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা, বিশুদ্ধ পানি পান করা, রাস্তার খোলা খাবার পরিহার করা ও খাবার ঠিক ভাবে সংরক্ষণ করা। এই অভ্যাস গুলো করুন এবং এসব নিয়ম পরিচিত ও আশে পাশের লোকদের জানান। ডায়রিয়া প্রতিরোধে সচেতন হোন।

Post a Comment

Previous Post Next Post

যোগাযোগ ফর্ম